Saturday, June 29, 2013

সিয়াম( রোযা )



রোযা
রোযা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজের বৈধ ইচ্ছা-চাহিদাগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরকালমুখী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দীক্ষা নিয়ে একজন ব্যক্তি যাতে তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হতে পারে সে উদ্দেশেই ফরয করা হয়েছে মাহে রমযানে সিয়াম পালনের বিধান বাঁচার প্রয়োজনে খাবার পানীয় গ্রহণজৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বৈধ যৌনবৃত্তি মনুষ্য জাতির একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় কিন্তু মাহে রমযানের দিনের বেলায় একমাত্র আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য একজন মুমিন এসব থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেয় আর এভাবেই পুরো একটি মাস জুড়ে সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর ইচ্ছা অনিচ্ছার নিরেখে জীবনযাপনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়হতে পারে ;যাকে আল-কুরআনের পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণতোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরযাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার (সূরা আল-বাক্বারা১৮৩)
 
তবেকেবল খাবার পানীয় গ্রহণ বৈধ যৌনবৃত্তি থেকে বিরত থাকলেই রোযার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রয়োগ হয় না এর জন্য বরং প্রয়োজন সকল প্রকার মিথ্যাচারিতা থেকে বিরত থাকা হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা কাজ ছাড়ল নাতার খাবার পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই
সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যা বেলায় সূর্যাস্তের পর ইফতার গ্রহণএকজন মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধের আওতায় নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পর পরকালে যে বাধামুক্ত জীবন পাবে তারই একটি ছোট্ট উদাহরণরোযার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন আর তাকওয়ার প্রতিদান জান্নাতী জীবনযেখানে কল্পানাতীতভাবে প্রয়োগ হবে মানুষের প্রতিটি ইচ্ছা-বাসনা তবে রোযার তাৎপর্য পেতে হলে সকল পাপাকর্ম থেকে গুটিয়ে নিতে হবে নিজেকে অসম্ভবভাবে বুকে ধারন করতে হবে ঈমানপূর্ণ পরিতৃপ্ত হৃদয় যে হৃদয় ঈমানী ভাব-চেতনা সদাজাগ্রত রাখার শুভ পরিণতিতে শোনার সুযোগ পাবে মহান আল্লাহর আহ্বান, হে মুতমায়িন (পরিতৃপ্তহৃদয়ফিরে এসো তোমার প্রতিপালকের পানেরাজি-খুশি হয়ে প্রবেশ করো আমার বান্দাদের ভেতরপ্রবেশ করো আমার জান্নাতে
মাহে রমযানের গুরুত্ব
*      মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর অসংখ্য বান্দাকে মুক্তি দিয়ে থাকেন জাহান্নাম থেকে
*      মাসে খুলে দেয়া হয় জান্নাতের সবকটি দরজাএবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের প্রবেশপথসমূহ
*      মাসে আছে ক্বদরের রাত-যা হাজার মাস থেকেও উত্তম
*      মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ আলকুরআন
রোযার ফযীলত
হাদীসে এসেছেরাসূলুল্লাহ সা.  বলেন, ঈমানের সাথেছোয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রোযা পালন করে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায় (বুখারী মুসলিম)
রোযা কিয়ামতের দিন রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে হাদীসে এসেছে, রোযা এবং কুরআন কিয়ামত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে রোযা বলবেহে রবআমি একে পানাহার কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো (আহমাদ)
রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়েও অধিক পছন্দনীয় হাদীসে এসেছেরাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন,ওই সত্ত্বার কসমযার হাতে মুহাম্মদের জীবনরোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়েও অধিক পছন্দনীয়
* রোযা জাহান্নমের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ঢাল স্বরূপ (আহমাদ)
রোযা ভঙ্গের কারণসমূহ
ইচ্ছাকৃতভাবে রোযার সময়ে খাবার বা পানীয় গ্রহণ
রোযা অবস্থায় যৌন-মিলন ঘটলে রোযা শুধু ভঙ্গই হয় না বরং ক্বাযা কাফ্ফারা উভয়টাই ওয়াজিব হয়ে যায়
চুম্বনস্পর্শহস্তমৈথুন ইত্যাদির মাধ্যমে রতিপাত ঘটলেও রোযা ভেঙ্গে যায়
পানাহারের বিকল্প হিসেবে রক্তগ্রহণস্যালাইনগ্রহণএমন ইঞ্জেকশন নেয়া যা আহারের কাজ করেযথাগ্লুকোজ ইঞ্জেকশন ইত্যাদিতে রোযা ভেঙ্গে যায়
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যায় হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাবলেছেনযে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করল তার রোযা ভেঙ্গে গেল(মুসলিম )
মহিলাদের হায়েয (ঋতুস্রাব নেফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণহলে রোযা ভেঙ্গে যায়
যে সব কারণে রোযা ভাঙ্গে না
*     ভুলবশত পানাহারে রোযা ভাঙ্গে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনযদি কোন ব্যক্তি রোযা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে;কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন
*     অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা ভঙ্গ হবে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হয়েছে তার রোযা ক্বাযা করার প্রয়োজন নেই (মুসলিম)
*     রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হয় না
*     রোগের কারণে উত্তেজনা ব্যতীত রতিপাত ঘটলে রোযা ভঙ্গ হয় না
*     স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন-আলিঙ্গনে রোযা ভঙ্গ হয় না আয়েশা (রাদিঃ)  থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছেতিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় তাকে চুম্বন করতেনÑ (বুখারীমুসলিম) তবে যে ব্যক্তি চুম্বন-আলিঙ্গনের পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না বলে আশংকা রয়েছেতার জন্য এরূপ করা সঠিক হবে না
রোযাদারের করণীয়
*     সেহরী খাওয়া কারণ সেহরী খাওয়া রাসূলের সুন্নাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সেহরী খাওকারণ সেহরীর মধ্যে বরকত রয়েছে
*     যথাসম্ভব সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করাবিলম্ব না করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ সময় পর্যন্ত কল্যাণের উপর থাকবে যতক্ষণ তারা যথাশীঘ্র ইফতার করবে (বুখারী)
*     কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
*     দান-খয়রাত বেশি বেশি করা
*     বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত-অধ্যয়ন আল্লাহর যিক্র করা
*     কম খাওয়া কম ঘুমানো
*     গরীব-দুঃখীঅসহায় মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন
*     ধৈর্য্যরে অনুশীলন করা
*     দুনিয়ার ব্যস্ততা কমিয়ে আখেরাতের প্রতি ধাবিত হতে চেষ্টা করা
*     জান্নাত পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া
*     দোয়া-মুনাজাত অধিক পরিমাণে করা, গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করা
*     যথাসাধ্য রোযাদারদের ইফতার করানো
*     শক্তি সামর্থ্য থাকলে রমযান মাসে ওমরা পালন করা
*     রমযানের শেষ দশ দিন তেকাফ করা
 
সম্পাদনাঃ-ইমতিয়াজুদ্দিন বিন রইসুদ্দিন

No comments:

Post a Comment