Wednesday, August 4, 2021

অযূ ছাড়া কি কোরআন স্পর্শ করা যাবে?

 অযূ ছাড়া কি কোরআন স্পর্শ করা যাবে?

উত্তরঃ


বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহিম।
“যাহারা পূত-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করে না”। ___ সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:৭৯।

অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে কি যাবে না এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আসুন দেখে নেই সত্যিই অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে কি-না।

আল কুরআনের যে আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বলে বলা হচ্ছে যে, ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না’ সেটি সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯নং আয়াত। এ আয়াতে আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন,
“যাহারা পূত-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করে না”। ___ সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:৭৯।

কুরআনের কোন একটি আয়াতকে বিছিন্নভাবে উপাস্থপন করা হলে অনেক সময় তা থেকে ভুল অর্থ বের হতে পারে। সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯নং আয়াতের ক্ষেত্রে এমনটিই দেখা যাচ্ছে। অথচ সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-৮০ আয়াত পর্যন্ত দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে এখানে আল্লাহ্‌তাআ'লা কি বুঝাতে চেয়েছেন।

আল্লাহ্‌তাআ’লা বলছেন,
“নিশ্চয়ই ইহা সন্মানিত কুরআন, যাহা সুরক্ষিত আছে কিতাবে। যাহারা পূত-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করে না। ইহা জগতসমূহের প্রতি পালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ”। ___ সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:৭৭-৮০।

একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একই বিষয়ের উপর কুরআনের অন্যান্য আয়াতগুলিও সামনে রাখতে হবে যাতে করে ভুল অর্থ করা থেকে বেচে থাকা যায়। যেমন সূরা আশ-শুয়ারার ২১০-২১২ আয়াত সমূহ। শানে নুযুলও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবহিত করে। সুতরাং এখানে সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯নং আয়াতটিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-৮০ আয়াতগুলির শানে নুযূল কি? তা হচ্ছে, মক্কার কাফির মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গণক, যাদুকর ইত্যাদি বলতো। তারা বলে বেড়াতো শয়তান কুরআন নিয়ে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পড়ে শিখিয়ে দেয়। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা অন্যদের জানায়। কাফিরদের এই প্রচারণার উত্তর আল্লাহ্‌তাআ’লা কুরআনের বেশ কয়েক যায়গায় দিয়েছেন। তার মধ্যে সূরা ওয়াকিয়ার এ আয়াতগুলি এবং সূরা আশ্-শু’আরার কয়েকটি আয়াত।

যেখানে আল্লাহ্‌তাআ'লা বলেন,
"শয়তানরা উহাসহ(কুরআন) অবতীর্ণ হয় নাই। উহারা এই কাজের যোগ্য নহে এবং উহারা ইহার সামর্থ্যও রাখে না। উহাদিগকে তো শ্রবণের সুযোগ হইতে দূরে রাখা হইয়াছে।" ___ সূরা শু’আরা ২৬:২১০-২১২।

সুতরাং এখানে এটা স্পষ্ট যে সূরা ওয়াকিয়ায় 'সুরক্ষিত গোপন কিতাব' বলতে আল্লাহ্তাআ’লা 'লওহে মাহফুজ'-এর কুরআনকে বুঝিয়েছেন। সূরা ওয়াকীয়ার ৭৯নং আয়াতে ‘মুতাহ্‌হারুন’ শব্দটির, নিষ্পাপ এবং অজু-গোসল করে পবিত্র, এ দুটি অর্থ হয়। তাই এ আয়াতে মুতাহ্‌হারুন বলতে আল্লাহ্‌তাআ’লা কি নিষ্পাপ সত্তা, নাকি অজু-গোসল করে পবিত্র হওয়া সত্তা বুঝিয়েছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইব্‌নে কাসীর(র) এ আয়াতের তাফসীরে ‘মুতাহ্‌হারুন’ বলতে ‘নিষ্পাপ ফেরেশতা’ বলেছেন। মুফতি শফি(র) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ মা’আরিফুল কুরআনে এ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, ‘পাক-পবিত্র কারা? বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেঈ তাফসীরবিদদগণের মতে এখানে ফেরেশ্‌তাগণকে বোঝানো হয়েছে, যারা পাপ ও হীন কাজকর্ম থেকে পবিত্র।

হযরত আনাস, সায়ীদ ইব্‌ন জুবায়ের ও ইব্‌ন আব্বাস(রা) এই উক্তি করেছেন(কুরতুবী, ইব্‌ন কাসীর) ইমাম মালিক(র) ও এ উক্তিই পছন্দ করেছেন (কুরতুবী)’। আর পৃথিবীর কুরআন তো সুরক্ষিত নয়, যে কেউ যখন-তখন তা ধরতে ও পড়তে পারে। সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯নং আয়াত যখন নাযিল হয় তখন কুরআন আজকের মত বই আকারে ছিল কি? ছিল না! যদি না থাকে তাহলে স্পর্শ করার প্রশ্ন অবান্তর।

পবিত্রতা বলতে আমরা দুই প্রকার পবিত্রতার কথা বুঝি। একটি হচ্ছে বাহ্যিক নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন, আরেকটি হচ্ছে কুফুরী, শিরক থেকে পবিত্রতা অর্জন। যেমন আল্লাহ্তালা বলেন,
<<>> "হে মু'মিনগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র; সুতরাং এই বৎসরের পর তাহারা যেন মসজিদুল হারামের নিকট না আসে।" ____ সূরা তাওবা ৯:২৮।

মুশরিক কাকে বলে? যিনি আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করেন তিনি হচ্ছেন মুশরিক। যেমন যিনি আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এনেছেন তিনি মু'মিন, যিনি সালাত আদায় করেন তিনি মুসাল্লী, যিনি সফরে থাকেন তিনি মুসাফির, যিনি হিজরত করেছেন তিনি মুহাজির ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ‌্‌র সত্তা, গুনাবলী এবং এখতিয়ারের সাথে কোন জিনিস, মানুষ, প্রাণী বা বস্তুকে প্র্ত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট করাই হচ্ছে আল্লাহ্র সাথে শরীক করা। আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছুকে শরীক করার এই কাজটিই শির্ক। শির্ককারী মানে মুশরিক। ঈমানদার কি কখনো মুশরিক হতে পারে? পারে! আল্লাহ্‌তাআ’লা তো তা-ই বলেন,

"তাহাদের অধিকাংশ আল্লাহে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁহার শরীক করে (অর্থাৎ মুশরিক ব্যতীত কিছুই নয়)।" ___ সূরা ইউসুফ ১২:১০৬।

ঈমানদার মুশরিক হওয়ার পর যদি বুঝতে পারে সে শিরকে লিপ্ত এবং সে তা থেকে এখন মুক্ত হতে চায়, তাহলে তাকে তাওবা করে নতুন করে কালেমার সাক্ষ্য দিতে হবে। যদি এ কাজটি সে না করে তাহলে সে যতই অজু করুক তার নাপাকী যাবে কি?

আল্লাহ‌্তাআ’লা কুরআনকে মানব জাতির হিদায়েতের জন্য নাযিল করেছেন, শুধু মুসলমানদের জন্য নয়। এখন একজন অমুসলিম যদি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান, কুরআন পড়ে দেখতে চান তাহলে তাকে কি কুরআন পড়তে দেয়া যাবে না? মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ আছে যেমন মিসর, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ইত্যাদি যেখানে অনেক খৃষ্টান বসবাস করেন এবং তাদের মাতৃভাষা আরবী। তারা যদি মনস্থির করেন আগে কুরআন পড়ে দেখবেন তারপর বুঝে ইসলাম গ্রহন করবেন, তাদেরকে তাহলে কি উত্তর দেয়া যাবে? ধরুন তাদেরকে বলা হল আপনারা অজু করে আসুন। এখন বলুন তাদের এই অজু কি তাদের পবিত্র করতে পারবে? কারণ এটা একটা বাহ্যিক কাজ মাত্র, তারা তো অন্তর থেকে তখনও আল্লাহ্তাআ’লাকে মেনে নেয়নি? আর অজুর হুকুম তো শুধু মুসলমানদের জন্যে।

ডা. মরিস বুকাইলি একজন ফরাসী চিকিৎসক যিনি বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান বইটির লেখক। বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন কুরআনে কোন ভুল নেই এবং আজকে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য কুরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বাইবেলে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে যা বলা হয়েছে তাতে ভুল রয়েছে। তিনি যখন এই বই লিখেন তখন প্রথমে বিভিন্ন ভাষায় কুরআনের অনুবাদের উপর নির্ভর করেন। পরবর্তীতে কুরআনকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য তিনি আরবী ভাষা শিখেন এবং কুরআনের অনুবাদগুলিকে যাচাই করেন। পরে তিনি ইসলামকে তার জীবন ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহন করেন। আল্‌হামদুলিল্লাহ্ এখন তিনি একজন মুসলিম। এখন বলুনতো তাকে যদি কুরআন ধরতে না দেওয়া হতো তাহলে কি তিনি কুরআন নিয়ে এ গবেষনা করতে পারতেন এবং ইসলাম কবূল করতেন? এখন আমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনার পরেও মুশরিক তাদের অবস্থা কি? আল্লাহ্তাআ’লা তো বলেছেন, তারা যেন মসজিদুল হারামের কাছে না আসে, তার মানে তারা হজ্জ করতে পারবে না তাই নয় কি? কিন্তু তারা কি আল্লাহ তা'আলার এই আদেশ মানছেন?

ঈমানদারদের মধ্যে যারা মুশরিক, তারা মুশরিক হওয়ার পর আদৌ কি ঈমানদার থাকে? আর মুশরিকদের ঠিকানা কোথায় হবে বলুন তো?

মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআ’লা বলেন,
"কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তাহারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের অগ্নিতে স্থায়ীভাবে অবস্থান করিবে; উহারাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট।" ___ সূরা বায়্যিনা ৯৮:৬।

যারা নিজেদেরকে ঈমানদার হিসাবেই মনে করছে অথচ তারা মুশরিক যাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, তাদের অজু করে কুরআন ধরলেই কি আর পড়লেই কি, কোন তফাৎ আছে কি?

আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"যখন কুরআন পাঠ করিবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হইতে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করিবে।" ___ সূরা নাহ্‌ল ১৬:৯৮।

শয়তানের এক নম্বর কাজ হচ্ছে মানুষকে কুরআন তথা আল্লাহ‌্‌র হিদায়তের নূর থেকে দূরে রাখা। যে কারণে কেউ কুরআন পড়লে অর্থ বুঝার ব্যাপারে সে যেন শয়তানের খপ্পরে পড়ে না যায়, ধোকা না খায়, তাই আল্লাহ‌্তাআ’লা তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। তাই তো আমরা দেখতে পাই অনেকে কুরআন পড়ে ভিন্ন অর্থ বুঝে, যে অর্থ আল্লাহ্‌তাআ’লা বুঝাতে চাননি। আবার অনেকে আছেন কুরআনের অর্থ বোঝার ব্যাপারে উদাসীন। তাদের কথিত মুরুব্বী, পীর ইত্যাদিরা কুরআনের যে অর্থ করে সেটাকেই মেনে নেয়, অন্য আলিমবৃন্দ তার কি অর্থ করেছে তা যাচাই বাছাই করে দেখে না। কিন্তু যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন ভাই কুরআন কি বুঝে পড়েন? তাহলে তারা আপনাকে উত্তর দিবে প্রথমতঃ মুরুব্বীদের নিষেধ আছে, দ্বিতীয়তঃ যেহেতু তারা আরবী ভাষা জানেন না সেহেতু তারা সরাসরি অর্থ বুঝতে পারেন না। আপনি যদি বলেন তাহলে বাংলা অর্থসহ কুরআন পাওয়া যায় সেটা পড়েন। তখন তারা উত্তরে বলে, একেকজন একেকভাবে অর্থ করেছে তাতে বিভ্রান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় তারা তা পরিহার করেন। দেখুন শয়তানের ধোকা দেখুন।

আলিমদের বেশিরভাগেরই আয় উপার্জনের মাধ্যম হচ্ছে কুরআন। ব্যবসায়ী যেমন নিজের ব্যবসার গোমর (প্রচলিত ভাষায়) ফাঁস করেন না পাছে ব্যবসায় ক্ষতি হয়, তেমনি এ ধরণের আলিমবৃন্দ(?) চান না তাদের ব্যবসায়িক গোমার ফাঁস হোক। কারণ সাধারন মানুষ কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে ফেললে তারা তাদের ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবেন না। তাই তারা মানুষকে কুরআন বুঝে পড়ার উৎসাহ দেননা, উদ্বুদ্ধ করেন না।

ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না কথাটি কুরআনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে এক বিরাট বাধা। অনেকের হয়তো ইচ্ছে হলো কুরআন পড়বে, তখন সে খেয়াল করল যে তার ওজু নেই, তখন সে ভাবল আচ্ছা এখন থাক পরে পড়ব। দেখুন শয়তান কমপক্ষে কিছুক্ষনের জন্য হলেও তো সফলকাম হলো। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, মানুষ তা পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী তার জীবন পরিচালনা করবে। ওজু ছাড়া কুরআন ধরা যাবে এটা কোন নতুন কথা নয়। । অজুসহ কুরআন ধরা, পড়া উত্তম।

Wednesday, August 22, 2018

আল্লাহর কি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে ?


সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, দুরুদ ও সালাম নাযীল হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর।
অতঃপর, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে তার হাত, চোখ, চেহারা, এর কথা বলেছেন, সহীহ হাদীসে আল্লাহর পা এর বর্ণনাও রয়েছে, কিন্তু এগুলো কি? এগুলো কি আল্লাহর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাকি সিফাত বা গুন?আশ’আরী ও মাতুরিদী সহ জাহমীয়া এবং আরও কিছু ফিরকার অনুসারীরা আল্লাহর হাত, পা, চেহারা, চোখ এর তা’বীল বা ব্যাখ্যা করেন, তারা আল্লাহর হাত, পা, চোখ, চেহারা এগুলোকে অস্বীকার করে এগুলোর বিভিন্ন অর্থ বের করেন, তাদের এসব ব্যাখ্যার বিরোধিতা ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ সহ সালাফগন করেছেন, তাই আমরা এগুলোর ব্যাখ্যা করবো না, কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এগুলো কি?
সিফাত বা গুন নাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ।
পাঠকের জন্য অতি সহজে এবং যথাসাধ্য সম্ভব ছোট করে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করছি।
লক্ষণীয় বিষয় এই বিষয়টি আলোচনার ক্ষেত্রে আমি শুধু মাত্র সেই সকল ইমামগনের বানী উল্লেখ করবো যাদের সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারীরা এবং দাবীদারেরা মতানৈক্য করেন না, অর্থাৎ ৪ মাযহাবের অনুসারীরা, আহলে হাদীস/সালাফী(মাযহাবের অনুসরন যারা করেন না), এবং যারা বিদ’আতী কেউই সেই সকল ইমামদের সম্পর্কে বিরূপ মত পোষণ করেন না বরং সকলেই তাদের সম্মান করেন এবং গ্রহন যোগ্য মনে করেন।
অর্থাৎ, আমি এখানে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ, ইমাম শাফিয়ী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ, ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য পেশ করবো।
এছাড়াও আমি এখানে বাংলাদেশ এর জনপ্রিয় আলিম ডঃ মানজুরে ইলাহী হাফিযাহুল্লাহ এর বক্তব্য উল্লেখ করবো,
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার চেহারা সম্পর্কে এরশাদ করেছেনঃ “তার(আল্লাহর) চেহারা ব্যতীত অন্য সকল কিছুই ধংসশীল” (সুরা কাসাসঃ ৮৮)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার হাত সম্পর্কে বলেছেনঃ “আমি যাকে স্বহস্তে সৃষ্টি করলাম, তার প্রতি সিজদায় অবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা প্রদান করল?” (সুরা স্বাদঃ ৭৫)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার হাত সম্পর্কে আরও বলেছেনঃ “ইয়াহুদরা বলে বেড়ায় আল্লাহর হাত সঙ্কুচিত। তাদের হাত সঙ্কুচিত হোক এবং তাদের বক্তব্যের জন্য তারা অভিশপ্ত হোক। বরং আল্লাহর উভয় হাত সুপ্রসারিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় করে থাকেন” (সুরা মায়েদাঃ ৬৪)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার চক্ষু সম্পর্কে বলেছেনঃ “আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় আপনি ধৈর্যধারন করুন। আপনিতো আমার(আল্লাহর) দৃষ্টির সম্মুখেই রয়েছেন” (সুরা আত-তুরঃ ৪৮)
তাহলে এটি স্পষ্ট হলো যে আল্লাহর হাত, চোখ, চেহারা, পা রয়েছে।

Wednesday, May 30, 2018

প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কঃ এক টুকরো মাংস ও প্রতারণার কাহিনি – উস্তাদ নুমান আলী খান


প্রেমও শারীরিক সম্পর্কঃ এক টুকরো মাংস ও প্রতারণার কাহিনি – উস্তাদ নুমান আলী খান

বোনের প্রশ্নঃ
আমাকে একটু হেল্প করবেন? আমি খুবই অসহায় ও বিষন্নতায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমি কান্নাটুকু পর্যন্ত থামাতে পারছি না। আমি ১৭ বছরের একজন বালিকা। আমি একটা ছেলের সাথে মেসেজে কথাবার্তা বলতাম, এভাবে কথাবার্তা চালিয়ে যাবার কারণে একটা সময়ে ঐ ছেলের সাথে ইমোশনালি আটকে যাই। কিন্তু এখন আমি খুবই অস্থির হয়ে পড়েছি, আমি তাওবা করছি এরপরে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর জন্য। আমি গত বছর তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম, তার সাথে বাজে জিনিসও (শারীরিক সম্পর্কসহ অন্যান্য) করেছিলাম। আমি জানি আমি খুব খারাপ হয়ে গেছি, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আমি জানি এই পৃথিবীটা খুবই স্বল্প সময়ের, আমি চাই না জাহান্নামে যাই এই ক্ষণিকের পৃথিবীতে অবাধ্যতার কারণে। আমি জানি এই লোকের সাথে আমার ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু তবুও কেন আমি তাকে বারবার অনুভব করি? যদিও সে আমাকে তার আসল (মন্দ) চেয়ারাটাও দেখিয়েছে। এমনকি সে আমাকে এও বলেছে যে ‘আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না’। আমি এখন মনে করি ইসলামই কেবল আমাকে সুখের দরজাটা দেখিয়ে দিতে পারে। আমি প্র্যাক্টিজিং মুসলিমা না, আমি প্রচূর পাপও করেছি, আমার জন্য কি আর কোনো আশা অবশিষ্ট আছে? প্লিজ ভাই, আমাকে সহায়তা করুন।
 
উস্তাদ নুমান আলী খানঃ

ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমত, পবিত্র কুরআন ও হাদীসে ‘ফাহশাহ’ (নির্লজ্জতা, বেয়াহাপনা, লজ্জাহীনতা) কে একটি সর্বোচ্চ পাপ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকৃতই একটা বড় ব্যাপার এটি। আমার দৃষ্টিতে আজকের যুগে পিতামাতার অবাধ্যতার পরেই এই কাজটি যুবক-যুবতীরা সর্বাধিক করে থাকে। এর শুরু হয়ে থাকে টেকনোলজি (প্রযুক্তি) দিয়ে – সেটা হতে পারে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, মেইল এবং ইন্টার্নেটের পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে প্রথমে শুরু হয়ে এর বাস্তবিক রুপ ধারণ করে শারীরিক সম্পর্কের মতো বড় নির্লজ্জ ও নিকৃষ্ট কর্মে – আর এটি মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।

Wednesday, October 18, 2017

কুরআনের ইলাহী সংরক্ষণ ও একজন ইহুদী পন্ডিতের ইসলাম গ্রহণ


আববাসীয় খলীফা মামূনুর রশীদের দরবারে মাঝে মাঝে শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হ’ত। এতে তৎকালীন বিভিন্ন বিষয়ে বিদগ্ধ পন্ডিতগণ অংশগ্রহণ করতেন। একদিন এমনি এক আলোচনা সভায় সুন্দর চেহারাধারী, সুগন্ধযুক্ত উত্তম পোষাক পরিহিত জনৈক ইহুদী পন্ডিত আগমন করলেন এবং অত্যন্ত প্রাঞ্জল, অলংকারপূর্ণ এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনা রাখলেন। বিস্মিত খলীফা সভা শেষে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ইহুদী? সে স্বীকার করল। মামূন তাকে বললেন, আপনি যদি মুসলমান হয়ে যান তবে আপনার সাথে উত্তম ব্যবহার করা হবে। তিনি উত্তরে বললেন, পৈত্রিক ধর্ম বিসর্জন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই বলে তিনি প্রস্থান করলেন।

আসুন জেনে নেই ওয়াইস আল-কারণীর (ওয়াজকরনীর) আসল ঘটনা

আসুন জেনে নেই ওয়াইস আল-কারণীর (ওয়াজকরনীর) আসল ঘটনা


উসাইর ইবনে যাবের (রাঃ) বলেন, যখনই ইয়্যমেন থেকে কোন যুদ্ধের কাফেলা মদীনায় আগমণ করতেন, তখন উমার (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মাঝে ওয়াইস বিন আমের আল-কারণী নামে কোন লোক আছে কি? কোন এক সময় ওয়াইস বিন আমের আগমণ করেছে জানতে পেরে উমার (রাঃ) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ওয়াইস বিন আমের? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি র্কান গোত্রের মুরাদ শাখার লোক? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ। তোমার শরীরে কি শ্বেত রোগ ছিল, যা থেকে তুমি সুস্থ হয়েছ, কিন্তু সামান্য স্থানে তার চি‎হ্ন রয়ে গেছে। তিনি বললেন হ্যাঁ। উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মাতা জিবীত আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবে। তার ছিল শ্বেত রোগ। সামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছে। সে তার মায়ের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। সে তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবং আনুগত্যশীল। সম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি যদি তাকে পাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিও। সুতরাং তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। ওয়াইস আল-কারণী উমার (রাঃ)এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করল।