Thursday, June 20, 2013

যত মত তত পথ



           আমাদের দেশে দিন দিন একটি করে দলের আবির্ভাব ঘটে। প্রত্যেকেই দাবী করে আমরাই সত্য। তারা বাদ দিয়ে যারা আছে সকলেই কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী। ভুল পথে আছে। এখন প্রশ্ন হল তাদের এ দাবী কতটুকু সত্য আসুন একটু ভেবে দেখি।
সীরাতে মুস্তাকীম তথা সেই সঠিক পথ কোন্‌টি, যার উপর চলার জন্যে আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই পথ ব্যতীত অন্য পথে চলতে নিষেধ করেছেন?
এই পথটি হচ্ছে দ্বীন ইসলামের পথ, যা দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলা সমস্ত রাসূল প্রেরণ করেছেন, যার জনেই সমস্ত কিতাব নাযিল করেছেন, যে দ্বীন ব্যতীত আল্লাহ্‌ অন্য কোন দ্বীন কবুল করবেন না, যে দ্বীনের পথে না চললে কেউ নাজাত পাবে না। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য পথে চলবে, সে সঠিক পথ হারা হয়ে যাবে এবং বিপদগামী হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
“এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের দিকে গমণ করোনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে। (সূরা আনআমঃ ১৫৩)
আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রাঃ)এর বর্ণিত হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতের ব্যাখ্যা অতি সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ
خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثُمَّ تَلَا ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে মাটিতে একটি রেখা টানলেন। সে রেখার উপর হাত রেখে বললেন, এটি হল আল্লাহর পথ। অতঃপর সে রেখার ডানে ও বামে আরো অনেক গুলো রেখা অঙ্কন করে বললেন, এ সবগুলোই পথ। তবে এ সব পথের মাথায় একটি করে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। সে সদাসর্বদা মানুষকে ঐ পথের দিকে আহবান করছে। মুসনাদে আহমাদ (১/৪৬১) একথা বলার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِه
“এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে”। (সূরা আনআমঃ ১৫৩)
অন্য এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা সীরাতুল মুস-াকীম তথা সঠিক পথের দৃষ্টান- বর্ণনা করেছেন। মনে করুন একটি সোজা পথ। পথের উভয় পাশে রয়েছে দু’টি প্রাচীর। পথের দুই পাশের প্রাচীরের দরজাগুলো খোলা রয়েছে। দরজাগুলোর উপর পর্দা ঝুলন- আছে। সোজা রাস্তার দরজার মুখে একজন আহবানকারী ডেকে বলছেঃ হে লোক সকল! তোমরা সকলেই সোজা পথে প্রবেশ কর। এদিক সেদিক যেয়ো না। আর একজন আহবানকারী রাস্তার উপর থেকে আহবান করছে। কোন মানুষ যখন দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখন সেই আহবানকারী ডেকে বলতে থাকেঃ অমঙ্গল হোক তোমার! দরজা খুলো না। কেননা তুমি যখন উহা খুলবে তখন তাতে প্রবেশ করবে।
উপরোক্ত উপমার মধ্যে পথটি ইসলাম। প্রাচীর দু’টি হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। উন্মুক্ত দরজাগুলো হচ্ছে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস’সমূহ। রাস্তার মাথায় আহবানকারীটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। রাস্তার উপরের আহবানকারীটি হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ হতে একজন নসীহতকারী, যা প্রত্যেক মুসলিমের অন-রে বিদ্যমান। মুসনাদে আহমাদ (১/৭৩)
সম্মানীত ব্লগার মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আমরা দ্বীন না জানার কারণে, তাওহীদ না বুঝার কারণে, সঠিক আকীদাহর কাছে না আসার কারণে আজ দাড়ী, টুপি, জুব্বা ও লম্বা পাগড়ী নিয়ে বাংলার বিভিন্ন এলাকাতে সিংহাসন পেতে এক শ্রেনীর ভন্ড সুফিরা বসে আছে। অধিকাংশ মুসলমান তাদের কাছে যেয়ে মুরীদ হচ্ছে। সেখানে গিয়ে তাদের হাতে-পায়ে চুমু খাচ্ছে, মা সহ যুবতী মেয়েরা তাদের কাছে গিয়ে হাত-পা টিপছে, সেখানে তারা প্রতি নিয়ত সেজদাহ দিচ্ছে আরও ইত্যাদি বহু অপকর্ম করে থাকে যা লজ্জার কথা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব।
তাদের মধ্যে কেউ বলে আমরা না হলে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। আবার কেউ বলে আমরা মুহাম্মাদী ইসলাম প্রচারকারী, কেউ বলে আমরা আওলাদে রাসূল ইত্যাদী যত মত তত পথ। তারা কারা ভেবে দেখেছেন কি? তারা হল দেওয়ানবাগী, সায়েদাবাদী, ফুরফুরা, ফূলপড়ী, লালনবাগী, কাদেরীয়া, মুজাদ্দেদীয়া, আলফেসানীয়া, চিশতিয়া,আটরশী, চরমোনাই, চন্দপড়ী, বোগদাদী, মাজভান্ডারী ইত্যাদী যা এ ব্লগে লিখলে বিশাল আকার ধারণ করবে। মোটকথা এরূপ বহুরূপী হরেক রকমের দল। এদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিন্মোক্ত বাণীটি সূর্যের মত পরিস্কার। তিনি বলেন,
وَإِنَّ أُمَّتِي سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثلاث وَسَبْعِينَ فِرْقَةً كُلُّهَا فِي النَّارِ إلاَّ وَاحِدَةً
“নিশ্চয়ই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত অন্যান্য সকল দলই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই নাজাত প্রাপ্ত দল কোন্‌টি? তিনি তাঁর পবিত্র জবানে নির্দিষ্ট করে সেই দলটির পরিচয় বলে দিলেনঃ
هم من كان على مثل مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي 
“যারা আমার এবং আমার সাহাবীদের পথে চলবে তারাই হবে সেই নাজাত প্রাপ্ত দল”। দেখুন,তিরমিযীঃ কিতাবুল ঈমান, হাকেমঃ কিতাবুল ইল্‌ম। ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন।
বন্ধুগণ! তারা আমাদেরকে যে পথে আহবান করছে তা আপনারা উপরোক্ত হাদীস দ্বারাই বুঝতে পেরেছেন। আর তা হল সরল সোজা পথের আশে-পাশে আকা-বাকা অনেক পথ, প্রত্যেকটি পথে শয়তান বসে ডাকছে। আসুন আসুন।
তাদের থেকে আমরা কিভাবে বাঁচতে পারব? আসুন আমরা কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহ, তাওহীদ ও সহীহ আকীদাহ এর পথ ধরি, যা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদার পথ।



No comments:

Post a Comment