Sunday, June 2, 2013

সালাম-মুসাফাহা সংক্রান্ত প্রচলিত ভুল


এটিহাদীসনয়

যে ব্যাক্তি আগে সালাম দিবে সে ৯০ সওয়াব পাবে, আর যে উত্তর দিবে সে ৩০ সওয়াব (অথবা ১০) পাবে।- উপরোক্ত কথাটি প্রসিদ্ধ হলেও হাদীসের কিতাবে তা খুঁজে পাওয়া যায়না। হাদীসে এব্যাপারে যা বর্ণিত আছে তার সারকথা হল, সালামের প্রতিটি বাক্যের বিনিময়ে দশটি করে সওয়াব পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে একটি হাদীস নীম্নে দেওয়া হলঃ

“এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন। তারপর লোকটি বসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ১০ সওয়াব । এরপর আরেক ব্যাক্তি আসল এবং বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের উত্তর দিলেন। তারপর লোকটি বসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ২০ সওয়াব । অর্থাৎ সে সালামের বিনিময়ে ২০টি সওয়াব পাবে। এরপর আরেক ব্যাক্তি আসল এবং বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। তারপর লোকটি বসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ৩০ সওয়াব। অর্থাৎ সে সালামের বিনিময়ে ৩০টি সওয়াব পাবে.” সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৯৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮৯।

এ বিষয়ের অন্যান্য হাদীস জানার জন্য দেখা যেতে পারে- আততারগীব ওয়া্ততারহীব, /৪২৮-৪২৯; রিয়াদুস সালিহীন, /২৫২-২৬৫। [মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল-২০০৫, পৃষ্ঠা-২৫] এবং [মাসিক আল কাউসার, মে-২০০৮, পৃষ্ঠা-৩৫]  

 

একটিভুলআমাল

সালামের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে “ওয়াবারাকাতুহু” এর পরে অনেকে “ওয়ামাগফিরাতুহু/ ওয়া জান্নাতু” বা এ জাতীয় অন্য বাক্য বৃদ্ধি করে থাকে। – এটি একটি ভুল আমাল। পূর্ণ সালাম হল আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু এবং পূর্ণ উত্তর হল ‘ওয়া আলাইকুমুস্‌সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’। সালামের সাথে ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে আরো অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কোন কোন বর্ণনায় ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে কিছু বাড়ানোর কথাও আছে। কিন্তু সেগুলো সনদের বর্ণনা সূত্রের নিরিখে সহীহ নয়। সুতরাং ‘ওয়াবারাকাতুহু’ এর পরে নিজ থেকে কিছু বাড়ানো ঠিক নয়। – সূরা হুদ-তাফসীরে কুরতুবী /৭১; তবারানী, আওসাত, হাদীস ৭৮৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ /৭০; মিরকাত শরহে মিশকাত /৫৫, আদ্দুরুল মুখতার /৪১৫; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলা ১১৭ [মাসিক আল কাউসার, আগস্ট -২০০৬, পৃষ্ঠা-৩০] এবং [মাসিক আল কাউসার, সেপ্টেম্বর -২০০৮, পৃষ্ঠা-৩৩]     

 

আমাদেরদেশেঅনেককেইদেখাযায়তারাবিদায়েরসময়বাচলেযাওয়ারসময়খোদাহাফেয (বাআল্লাহহাফেয)বলেথাকে।বিদায়েরসময়এটাবলাকিঠিক? বিদায়েরসময়েরসুন্নতআমালকী?

– সাক্ষাতের সময় যেমন সালাম দেয়া সুন্নত, তেমনি বিদায়ের সময়ও সালাম দিয়ে বিদায় নেওয়া সুন্নত। এসম্পর্কে একাধিক হাদীস আছে। যেমন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন- “ যখন তোমাদের কেউ কোন মজলিসে পৌঁছবে তখন সালাম দিবে। যদি অনুমতি পাওয়া যায় তবে বসে পড়বে। এরপর যখন মজলিস ত্যাগ করবে তখনও সালাম দিবে। কারন প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালাম অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপুর্ন নয়। অর্থাৎ উভয়টির গুরুত্ব সমান.” – জামে তিরমিযী /১০০

সুতরাং বিদায়ের সময়ও ইসলামের আদর্শ এবং সুন্নত হল সালাম দেয়া। তাই সালামের স্থলে বা এর বিকল্প হিসেবে ‘খোদা হাফেয’ (বা আল্লাহ হাফেয) বা এ জাতীয় কোন কিছু বলা যাবেনা। অবশ্য সালামের আগে পৃথক ভাবে দুয়া হিসেবে  ‘খোদা হাফেয’ (বা আল্লাহ হাফেয) বলা দোষের কিছু নেই।

আরো দেখা যেতে পারে, শুআবুল ইমান /৪৪৮; সুনানে আবু দাউদ ১৩/৭০৭; মিন আদাবিল ইসলাম, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহঃ ১৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া /৪৯১। [মাসিক আল কাউসার, মার্চ-২০০৫, পৃষ্ঠা-২৮]

 

সালামদেওয়ারএকটিভুলপদ্ধতি

বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে দেখা যায় বক্তাগণ মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে সূদীর্ঘ বন্দনার অবতারনা করার পর সালাম দেন। এ রীতিটি ভুল। যেমন বলে থাকেন, “মঞ্চে উপবিষ্ট শ্রদ্ধেয় সভাপতি, মাননীয় পরিচালক, মান্যগণ্য অমুক অমুক সাহেব ও আমার শ্রোতাবন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম।“ নিয়ম হল শ্রোতাদের মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে সালাম দেওয়া। সাক্ষাতের নিয়মাবলির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সালামের কথাই বলা হয়েছে। [মাসিক আল কাউসার, মে-২০০৫, পৃষ্ঠা-৩৫]   

 

প্রশ্নঃ দুজন মহিলার পরস্পর সাক্ষাতে সালাম ও মুসাফাহা করার বিধান আছে কি?

সালাম মুসাফাহার বিধান শুধু পুরুষের জন্য নয়। এগুলো যেমন দুজন পুরুষের পরস্পর সাক্ষাতের সময় সুন্নত তেমনি দুজন মহিলার বেলায়ও সুন্নত। সহীহ বুখারী /৯১৯, /৯২৬, ফাতহুল বারী ১১/৫৭; আদ্দুরুল মুখতার /৩৬৮। [মাসিক আল কাউসার, ফেব্রুয়ারি-২০০৬, পৃষ্ঠা-২৭]

 

একটিভুলরীতি

কোন কোন মানুষকে সালাম বা মুসাফাহার পর নিজ বুকে হাত রাখতে দেখা যায়। এটি একটি ভুল রীতি। একাজটিকে যদি সালাম-মুসাফাহার সুন্নত নিয়মের অংশ মনে করা হয় তাহলে এটি বিদআত; আর এমনি করা হলে এটা একটা অনর্থক কাজ। মহব্বতের প্রকাশ তো সালাম-মুসাফাহার মাধ্যমেই হয়ে গেল। বাড়তি কিছুর তো প্রয়োজন নেই। মোটকথা এটি সংশোধন যোগ্য। [মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল -২০০৬, পৃষ্ঠা-৩৭]


No comments:

Post a Comment