Monday, August 19, 2013

ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগনের অভিমত।

ইমাম আবু হানিফা(রাহিমাহুল্লাহ), তার আসল নাম ‘নুমান’। তিনি চার জন্য মুজতাদিদের মদ্ধ থেকে একজন ছিলেন।
ইমাম আবু হানিফার অনুসারীরা অর্থাৎ আল-হানাফ/ হানাফীরা অনেক সময় আগে থেকেই ইমাম আবু হানিফাকে ‘ইমামে আযম’ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় ইমাম বলে দাবী করে আসছে।
অতঃপর, হানাফিরা ইমাম আবু হানিফাকে হাদিস শাস্ত্রের পন্ডিত বলে দাবী করে, অতঃপর তারা দাবী করেন যে ইমাম আবু হানিফা বিশাল বড় মুহাদ্দিস ছিলেন এবং তার লাখ লাখ হাদীস মুখস্ত ছিল।
আমি এখানে ইমাম আবু হানিফা(রাহিমাহুল্লাহ) এর ফিখহি জ্ঞান নিয়ে কিছুই বলবো না, এবং বলার যোগ্যতা আমার নেই। আমি অবশ্যই স্বীকার করি ইমাম আবু হানিফার মত মুজতাহিদ বর্তমান পৃথিবীতে নেই, তিনি বিশাল জ্ঞানী ছিলেন।
কিন্তু আসলেই কি ইমাম আবু হানিফা হাদিসের পণ্ডিত ছিলেন?
আসলেই কি ইমাম আবু হানিফা বড় মুহাদ্দিস ছিলেন?
আসলেই কি ইমাম আবু হানিফার লাখ লাখ হাদীস মুখস্ত ছিল?
ইমাম আবু হানিফার হাদিসের জ্ঞান কিরুপ ছিল, এটি আমরা নিজেরা নিজ থেকে বলতে পারব না, বরং পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগন তার সম্পর্কে কি বলেছেন তা দেখতে হবে। তাই, এখানে আমি কিছু মুহাদ্দিসগনের কথা উল্লেখ করছিঃ

১. ইমাম মুসলিম(সহীহ মুসলিম এর লেখক) বলেন, “তার(ইমাম আবু হানিফার) কাছে বেশী সহীহ হাদিস ছিল না। তিনি ছিলেন ‘মুদতারিব আল-হাদিস’ অর্থাৎ তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে দিশাহারা ও তিনি হাদিস মিলিয়ে ফেলতেন”[আল-কুনা ওয়াল আসমা, ৩১/১]


২. ইমাম নাসাই(সুনানে নাসাঈ এর লেখক) বলেন, “তিনি(ইমাম আবু হানিফা) হাদিসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না এবং তিনি অনেক ভুল করেছেন(হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে) যদিও তিনি মাত্র কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন”[আদ-দুয়াফা ওয়াল মাতরুকিন, পৃঃ-৫৭]

৩. ইমাম বুখারী(সহীহ বুখারী এর লেখক) বলেছেন, “তারা তার(ইমাম আবু হানিফা) সম্পর্কে নীরব” [তারীখ আল কবীর, ৪/২/৮১]
ইমাম ইবন কাসীর বলেন, যদি ইমাম বুখারী কারো সম্পর্কে বলেন যে, “তারা তার সম্পর্কে নীরব” তার মানে হলো- যার সম্পর্কে ইমাম বুখারী এই কথা বলেছেন সেই ব্যাক্তি ইমাম বুখারীর কাছে অনেক নিচু পর্যায়ের(হাদিস শাস্ত্রের ক্ষেত্রে)[মুখতাসার উলুম আল-হাদীস, পৃঃ-১১৮]
আল-ইরাকী বলেছেন- “আল-বুখারী এই কথা(তারা তার সম্পর্কে নীরব) তাদের সম্পর্কে বলেছেন যাদের হাদীস পরিত্যক্ত”[আর-রাফ ওয়া আত-তাকমীল, পৃঃ-২৮২]
অর্থাৎ ইমাম বুখারীর মত অনুসারেও ইমাম আবু হানিফা(রাহিমাহুল্লাহ) হাদিস শাস্ত্রে দুর্বল ছিলেন।

৪. আল-উকাইলী বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন আহমাদ আমাদের বলেছেনঃ আমি আমার পিতা(ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ ‘আবু হানিফার হাদিস সমুহ দুর্বল’” [আদ-দুয়াফা, পৃঃ-৪৩২]

৫. ইবন আবী হাতিম বলেছেন, “হাজ্জাজ ইবন হামজাহ আমাদের বর্ণনা করেছেনঃ আবদান ইবন উসমান আমাদের বর্ণনা করেছেনঃ আমি শুনেছি ইবন আল-মুবারাক বলেছেন, ‘আবু হানিফা হাদিস সম্পর্কে মিসকিন(গরীব/দরিদ্র) ছিলেন’” [আল-জারহ ওয়াত-তা’দীল, ৪/১/৪৫০]

৬. ইমাম দারুকুতনী বলেন, “মুসা ইবন আবী আ’ইশাহ থেকে আবু হানিফা ও আল-হাসান ইবন উমারাহ ছাড়া কেউ এটি বর্ণনা করেন নি, এবং এরা  দু’জনই(আবু হানিফা ও আল-হাসান ইবন উমারাহ) দুর্বল” [সুনানে দারুকুতনী, পৃঃ-১৩২]

৭. আল-হাফিয আবুল হক আল-ইশবীলী বলেছেন, “আবু হানিফা হাদিসে দুর্বল থাকার কারনে প্রমান হিসাবে তিনি উপযুক্ত নন” [আল-আহকাম আল-কুবরা, ১৭/২]

৮. ইমাম যাহাবী বলেছেন, “আন-নুমান(ইমাম আবু হানিফা), একজন ইমাম, আল্লাহ তার উপর রহমত করুন। ইবন আবী বলেছেনঃ তিনি(ইমাম আবু হানিফা) যা বর্ণনা করেছেন তার বেশীর ভাগই ভুল, ত্রুটিপূর্ণ এবং সংযোজিত তবে তার কিছু গ্রহন যোগ্য হাদিসও রয়েছে। আন-নাসাই বলেছেনঃ তিনি(ইমাম আবু হানিফা) হাদিসে শক্তিশালী নন, তিনি অনেক ভুল করেছেন যদিও তিনি তেমন বেশী হাদিস বর্ণনা করেন নি। ইবন মঈন বলেছেনঃ তার হাদীস লিপিবদ্ধ করা হত না” [আদ-দুয়াফা]

৯. ইবন সা’দ বলেছেনঃ “তিনি(ইমাম আবু হানিফা) হাদিসে দুর্বল ছিলেন”[আত-তাবাকাত, ৬/২৫৬]

১০. ইবন জাওযী বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান ছাওরী বলেছেন, “তিনি(ইমাম আবু হানিফা) বিশ্বস্ত ও যথাযথ নন(হাদিসের ক্ষেত্রে)”[কিতাব আদ-দুয়াফা ওয়াল মাতরুকীন,৩/১৬৩]

উপরে বর্ণিত যুগ শ্রেষ্ঠ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগনের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হল যে ইমাম আবু হানিফা(রাহিমাহুল্লাহ) হাদিস শাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন না বরং দুর্বল ছিলেন।
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন না বরং দুর্বল রাবী ছিলেন। লাখ লাখ হাদীস মুখস্ত ছিল না বরং তিনি শুধু মাত্র কিছু হাদিস বর্ণনা করেছেন তার মদ্ধেও অতি মাত্রায় ভুল।
ইয়াহইয়া ইবন মঈন প্রশংশা করেছেন ইমাম আবু হানিফার, কিন্তু ইয়াহইয়া ইবন মঈন নিজেই বলেছেন যে ইমাম আবু হানিফার হাদিস লিপিবদ্ধ করা হত না। যদি আপনার হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে বিন্দু পরিমাণও জ্ঞান থাকে তাহলেও আপনি জেনে থাকবেন যে একমাত্র দুর্বল রাবীদেরই হাদিস লিপিবদ্ধ করা হত না।
অর্থাৎ এক স্থানে ইবন মঈন ইমাম আবু হানিফার প্রশংশা করেছেন আরেক স্থানে ইবন মঈন ইমাম আবু হানিফাকে দুর্বল বলেছেন। অর্থাৎ ইবন মঈন এর নিজের কথা নিজেরই বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে ইবন মঈন এর কথার উপর ভিত্তি করা ঠিক হবে না, কেননা ইবন মঈন পরস্পর বিরোধী কথা বলেছেন।

অন্যান্য প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগন ইমাম আবু হানিফাকে দুর্বল বলেছেন তা ইতিপূর্বে আমি উল্লেখ করেছি।
আমি কোন কথাই খতীব বাগদাদীর “তারিখে বাগদাদ” থেকে বলি নি, কেননা তারিখে বাগদাদে অনেক ভুল কথা আছে, তারিখে বাগদাদে ইমাম আবু হানিফার বিপক্ষে এতই মন্দ কথা রয়েছে যা বিশ্বাস করার মত নয়, তাই আমি তারিখে বাগদাদ থেকে কিছুই উল্লেখ করি, কেউ যদি ইমাম আবু হানিফার প্রশংসায় কিছু উল্লেখ করেন তাহলে আপনিও তারিখে বাগদাদ থেকে উল্লেখ করবেন না।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগন হলেনঃ
১. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল।
২. ইমাম মালিক ইবন আনাস।
৩. ইমাম বুখারী।
৪. ইমাম মুসলিম।
৫. ইমাম আবু দাউদ।
৬. ইমাম তিরমিযী।
৭. ইমাম নাসাঈ।
এছারাও আর অনেকে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উপরে উল্লেখিত প্রসিদ্ধ ৭ জন মুহাদ্দিস হতে ১জন  সম্পর্কেও কেউ এই কথা বলেন নি যে, ইনি দুর্বল অথবা ইনি হাদিসে ভুল করতেন।
কিন্তু ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে এরুপ কথা অনেক বলা হয়েছে।
এ থেকেই স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে আসলেই ইমাম আবু হানিফা হাদিসে দুর্বল ছিলেন।
কিন্তু ফেকাহতে ইমাম আবু হানিফা সর্বদাই প্রশংশা এর অধিকারী।
আবু হাফস ইবন শাহীন বলেছেন, “ফেকাহ তে ইমাম আবু হানিফার জ্ঞানকে কেউ ভুল বলতে পারবে না কিন্তু হাদিসে তিনি যথাযথ নন”[তারীখ আল-জারজান, পৃঃ-৫১০-৫১১]

আমাকে গাল-মন্দ করবেন না, আমি নিজে থেকে কিছুই বলি না, পূর্ববর্তী মুহাদ্দিস ও হাদীসের পণ্ডিতগন যা বলেছেন তাই আমি উল্লেখ করেছি।
আমাকে লা-মাযহাবী ও ইংরেজদের দালাল বলে গালী দিবেন না কেননা আমি হাম্বলী ফেকাহ অনুসরন করি।

No comments:

Post a Comment